গোপন বিয়েতে বাবার আপত্তি, রাজি করাতে দিলেন দুই লাখ রুপি: ট্র্যাজেডি কুইন মীনা কুমারীর জীবনের অজানা অধ্যায়

আজ বলিউডের ‘ট্র্যাজেডি কুইন’ খ্যাত মীনা কুমারীর জন্মদিন। ১৯৭২ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে প্রয়াত এই কিংবদন্তি অভিনেত্রীর জীবন ছিল এক অন্তহীন যন্ত্রণার গল্প, যার সূচনা হয়েছিল শৈশব থেকেই। জন্মেছিলেন মেহজাবীন বানু নামে। মাত্র চার বছর বয়সে বাবার ইচ্ছায় নাম লেখান সিনেমার জগতে—শুধু উপার্জনের যন্ত্র হয়ে ওঠার জন্য।

তাঁর বাবা আলী বক্স এক সময়ের সংগীতশিল্পী ছিলেন। দারিদ্র্যক্লিষ্ট পরিবার নিয়ে থাকতেন মুম্বাইয়ের দাদারে একটি চাওল ঘরে। মেয়েরা যেন উপার্জনের উৎস হয়ে ওঠে, সে ভাবনাতেই ছোট্ট মীনাকে স্টুডিও থেকে স্টুডিওতে নিয়ে যেতেন। তাঁর প্রথম পারিশ্রমিক ছিল মাত্র ২৫ রুপি। ছোট্ট মেয়েটিই হয়ে উঠেছিলেন পুরো পরিবারের ভরণপোষণের একমাত্র ভরসা।

মীনা কুমারী নিজের জীবনের এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "ভাবিনি, প্রথম শুটিংয়ের দিনই আমি শৈশবকে বিদায় জানাচ্ছি। ভেবেছিলাম স্কুলে যাব, বন্ধুদের সঙ্গে খেলব। কিছুই হয়নি।" বাবা আলী বক্স মেয়েদের স্কুলে পাঠানোকে অপচয় মনে করতেন। বই পড়ার আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও মীনাকে কাজ করতে হতো দিনের পর দিন। এই টাকায় চলে সংসার, আর তার বিনিময়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন তিনি।

নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও নিজের জীবনের কোনো সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারেননি। যখন পরিচালক কামাল আমরোহীর সঙ্গে প্রেমে জড়ান, জানতেন বাবা এই সম্পর্ক মানবেন না। তাই গোপনে বিয়ে করেন, পরে বাবাকে রাজি করাতে দেন দুই লাখ রুপি। তবুও বাবা আলী বক্স তাঁদের সম্পর্ক মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি একসময় বাবার বাড়ি থেকেও বের করে দেন তাঁকে—যে বাড়িটি কিনেছিলেন মীনার উপার্জনের টাকাতেই।

এই ঘটনার পর বাবাকে লেখা এক চিঠিতে মীনা অনুরোধ করেন, যেন অন্তত তাঁর জামাকাপড় ও বই ফেরত দেওয়া হয়। গাড়িটিও ফেরত পাঠিয়ে দেন। তাঁর লেখায় ফুটে ওঠে এক অব্যক্ত যন্ত্রণা—বঞ্চনার বিরুদ্ধে নীরব প্রতিরোধ।

১৯৭২ সালে তাঁর সর্বশেষ ছবি ‘পাকিজা’ মুক্তি পায়। এর কিছুদিন পরই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে ৩১ মার্চ, লিভার সিরোসিসে মৃত্যু হয় এই মহানায়িকার।

শৈশবে রোপিত দুঃখের বীজ আমৃত্যু তাঁকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। ক্যামেরার সামনে একের পর এক অসাধারণ অভিনয় করলেও ব্যক্তিগত জীবনে মীনা কুমারী রয়ে গেছেন নিঃসঙ্গ, নিঃস্ব ও বেদনাক্লিষ্ট এক নারী—যার গল্প এখনও হৃদয় ছুঁয়ে যায়।