‘জলকৌড়ি’ নাটকের শুটিংয়ে এক হৃদয় ছোঁয়া ঘটনা, আবেগে আপ্লুত সবাই
অভিনয়ের ছয় বছরের যাত্রায় এবারই প্রথমবার ডুবুরির চরিত্রে অভিনয় করলেন খায়রুল বাসার। সুব্রত কুমার সঞ্জীব পরিচালিত ‘জলকৌড়ি’ নাটকে তাঁকে দেখা যাবে ‘বাতেন ডুবুরি’ চরিত্রে, যা তাঁর জন্য একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা। বরিশালের শায়েস্তাবাদে টানা চার দিন ধরে হয়েছে এই নাটকের শুটিং।
বাসার জানান, তাঁর চরিত্রটি পারিবারিকভাবে ডুবুরির পেশায় নিয়োজিত। সেই ঐতিহ্য বুকে ধারণ করেই কাজটি করেন বাতেন ডুবুরি। চারটি পুকুরে শুটিং করতে গিয়ে তাঁকে প্রায় দেড় শতাধিকবার পানির নিচে ডুব দিতে হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে নতুন চোখে দেখিয়েছে পানির নিচের জগৎকে।
তবে শুটিংয়ের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা ঘটে এক দৃশ্যধারণের সময়। নাটকের সহশিল্পী দেবাশীষ চক্রবর্তীর একটি মূল্যবান আংটি পুকুরে হারিয়ে যায়। এটি ছিল তাঁর বাবার স্মৃতি হিসেবে পাওয়া বিশেষ উপহার। অভিনয়ের পাশাপাশি ইতিহাসের অধ্যাপক এই অভিনেতা খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা চেষ্টার পরও যখন কেউ আংটিটি উদ্ধার করতে পারেননি, তখন বাসার নিজেই শেষবারের মতো চেষ্টা করতে নামেন। নিষেধের পরেও পানিতে ডুব দেন তিনি, আর চমকপ্রদভাবে খুঁজে পান হারিয়ে যাওয়া আংটি। মুহূর্তেই আবেগে ভাসে পুরো ইউনিট। দেবাশীষের মুখে ফিরে আসে যেন রাজ্য জয়ের হাসি।
এই প্রসঙ্গে বাসার বলেন, “আমি শুধু একটা স্মৃতি ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। তাঁর চোখে আনন্দ দেখে মনে হলো—আমার ছোট্ট এই প্রচেষ্টা অনেক বড় কিছু হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
এই নাটকের মাধ্যমে হারিয়ে যেতে বসা একটি পেশার কথাও উঠে এসেছে—পুকুর থেকে স্বর্ণ বা মূল্যবান জিনিস খুঁজে আনার কাজ একসময় অনেকের জীবিকা ছিল। অনেকের বাবা-দাদারা এই পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নাটকটি সেই গ্রামীণ ঐতিহ্যকেই স্মরণ করিয়ে দিতে চায়।
নাটকে বাসারের বিপরীতে অভিনয় করেছেন সাদনিমা বিনতে নোমান। পরিচালক সঞ্জীব বলেন, “এই গল্প আমার শৈশবের দেখা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এসেছে। বাসার এত পরিশ্রম করেছে, আমি সত্যি মুগ্ধ। দর্শক নাটকটি দেখলেই বুঝবেন, আমরা কতটা আন্তরিকতা দিয়ে কাজটি করেছি।”
‘জলকৌড়ি’ শুধু একটি নাটক নয়—এটি হারাতে বসা ইতিহাস, স্মৃতি, আর মানবিক আবেগের গল্প।