একটি প্রশ্ন থেকে শুরু, আজ তিনি নাটকের আলোচিত মুখ: সাদনিমা বিনতে নোমানের যাত্রা

শুধু একটি প্রশ্নই বদলে দিয়েছিল তাঁর জীবনের গতিপথ—‘তুমি কাজ করবে নাকি?’
২০০৭ সালের কথা। বয়স তখন মাত্র সাত। উত্তরার বাসার সামনে হাফ স্টপ ডাউনের একটি বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিং চলছিল। কৌতূহলী ছোট্ট সাদনিমাকে দেখে শুটিং ইউনিটের এক সদস্য এই প্রশ্নটি করেছিলেন। কিছুই জানতেন না টিভি বা অভিনয় নিয়ে। তবু সেই প্রশ্নের সূত্র ধরেই শুরু হয় তাঁর পথচলা।

সেই ব্যক্তি পরদিন সাদনিমার মা–বাবার সঙ্গে দেখা করেন। পরিবার সম্মতি দিলে সুযোগ আসে অমিতাভ রেজার একটি বিজ্ঞাপনে কাজের। এরপর ২০১৬ সাল পর্যন্ত একের পর এক বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেন। সেসময় নিজেকে শিশু মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন সাদনিমা বিনতে নোমান।

এরপর আসে বিরতির সময়। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক, এরপর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। তবে অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা ছিল গভীরে। তাই চার বছরের বিরতির পর নিজেই সিদ্ধান্ত নেন অভিনয়ে ফিরবেন। বলেন,
“এবার আমি নিজের ইচ্ছায় ফিরেছি। আমার মনে হয়েছে, আমি পারব। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়রা অনেক উৎসাহ দিয়েছে।”

২০২৫ সালের ভালোবাসা দিবসে নাটক ‘মনেরই রঙে রাঙিয়ে’ দিয়ে নাট্যাঙ্গনে পার্শ্বচরিত্রে অভিষেক হয় তাঁর। ‘জুঁই’ চরিত্রে তাঁর অভিনয় নজরে পড়ে নির্মাতা পার্থ সরকারের। এরপরই আসে বড় সুযোগ—নাটক ‘গোল্ডফিশ’-এ প্রধান চরিত্র ফারিয়া হিসেবে। এই নাটকে তিনি তুলে ধরেন এক সংগ্রামী নারীর জীবনের গল্প। নাটকটি প্রচার হয় বাংলাভিশনে এবং দর্শকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলে।

এরপর আরও কিছু নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। এর মধ্যে ‘আগলে রেখো আমায়’-এ এক ট্রাভেল ভ্লগারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি রংপুরে গিয়ে রহস্যময় এক রেস্তোরাঁ মালিকের সঙ্গে পরিচিত হন। পাঁচটি নাটকেই তাঁর সহশিল্পী ছিলেন খায়রুল বাসার, যাঁর সম্পর্কে সাদনিমা বলেন,
“উনি খুব বিনয়ী ও আন্তরিক। ওনার কাছ থেকে শুটিং সেটে অনেক কিছু শিখেছি।”

বর্তমানে রোমান্টিক ও রোমান্টিক-কমেডি ঘরানার নাটকে বেশি কাজ করছেন। ভবিষ্যতে থ্রিলার ও সাসপেন্সধর্মী কাজ করতে আগ্রহী তিনি। বাংলা সিনেমাতেও কাজের ইচ্ছা আছে, তবে আগে নিজেকে আরও প্রস্তুত করতে চান।

নিয়মিত নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজন প্রাইমে থ্রিলার, ড্রামা ঘরানার সিনেমা-সিরিজ দেখেন তিনি। নিজের অভিনয়ের অনুপ্রেরণা হিসেবে মানেন জয়া আহসানকে। বলেন,
“উনি আমার আইডল। ছোটবেলা থেকে দেখে বড় হয়েছি। পর্দায় ওনাকে মুগ্ধ হয়ে দেখি—অভিনয়ে ওনার নিখুঁততা, চরিত্রে নিজেকে মিশিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা অসাধারণ।”

সাদনিমার জন্ম চট্টগ্রামে হলেও ছোটবেলা থেকেই ঢাকার উত্তরায় বড় হয়েছেন। শিশু শিল্পী থেকে এখন নাটকের মুখ্য চরিত্রে—তাঁর এই যাত্রা প্রমাণ করে, কখনো কখনো জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে একটি সাধারণ প্রশ্ন। আর সেই প্রশ্ন যদি হয়—‘তুমি কাজ করবে নাকি?’