হলিউডের কিংবদন্তি অ্যাকশন তারকা ব্রুস উইলিস বর্তমানে জীবনযুদ্ধ লড়ছেন এক জটিল ও কঠিন রোগের সঙ্গে। ২০২৩ সালে তার মধ্যে ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া ধরা পড়ে এমন এক স্নায়বিক ব্যাধি, যা ধীরে ধীরে তার স্মৃতি, ভাষা ও দৈনন্দিন কার্যকলাপকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এর আগেই, ২০২২ সালে অ্যাফেসিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি অভিনয়জগৎ থেকে অবসর নিতে বাধ্য হন।

সম্প্রতি ব্রুসের স্ত্রী এমা হেমিং উইলিস মার্কিন টেলিভিশন শো গুড মর্নিং আমেরিকা-তে তার স্বামীর বর্তমান স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে আবেগঘন সাক্ষাৎকার দেন। অনুষ্ঠানে তার নতুন বই ‘দ্য আনএক্সপেক্টেড জার্নি’-এর একটি অংশ দেখানো হয়, যেখানে এমা এই দুরারোগ্য ব্যাধি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেছেন।

এমা সাক্ষাৎকারে বলেন  “যেদিন ডাক্তার প্রথম আমাকে এই রোগের নাম বললেন, আমি কিছুই জানতাম না। এমনকি নামটা সঠিকভাবে উচ্চারণও করতে পারছিলাম না। আমি পুরোপুরি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। ব্রুস হয়তো শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকলেও মানসিকভাবে বুঝতে পারছিল না তার মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসছে। এখন আমরা তার সঙ্গে ভিন্নভাবে কথা বলার চেষ্টা করি। প্রতিদিন একই রকম থাকে না, তবে কিছু মুহূর্তে সে নিজেকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারে।”

তিনি আরও জানান, অসুস্থতার আগে ব্রুস ছিলেন প্রাণখোলা, আড্ডাপ্রিয় ও পরিবারকেন্দ্রিক মানুষ। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি চুপচাপ হয়ে যেতে শুরু করেন। পরিবারে একসঙ্গে থাকলেও যেন এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়ে গিয়েছিল তার চারপাশে। “সে দূরে সরে যাচ্ছিল, ঠান্ডা আচরণ করছিল, যা ব্রুসের স্বাভাবিক উষ্ণতা ও স্নেহের সঙ্গে একেবারেই মিলছিল না। সেটি দেখা ছিল আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর ও কষ্টের অভিজ্ঞতা,” বলেন এমা।

এমার ভাষায়, ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়ার কারণে ব্রুস এখন মূলত তার শৈশবের স্মৃতিতে আটকে আছেন। “সে আমাদের পুরোপুরি চিনতে পারে না, কিন্তু তার হাসি এখনো আছে। সেই হাসিই আমাদের বেঁচে থাকার শক্তি। যদিও সময় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, তবুও আমি কৃতজ্ঞ যে সে এখনো আমাদের সঙ্গে আছে।”

ব্রুস উইলিস শুধু একজন জনপ্রিয় অভিনেতা নন, তিনি কোটি ভক্তের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম। ‘ডাই হার্ড’, ‘দ্য ফিফথ এলিমেন্ট’, ‘আর্মাগেডন’ কিংবা **‘দ্য সিক্সথ সেন্স’-এর মতো অসংখ্য কালজয়ী ছবিতে তার অভিনয় বিশ্ব সিনেমাকে সমৃদ্ধ করেছে। আজ তিনি যদিও অভিনয়জগত থেকে দূরে, তবুও তার পরিবার, সহকর্মী ও ভক্তরা একসঙ্গে প্রার্থনা করছেন তার জন্য।
ব্রুসের লড়াই প্রমাণ করে, পর্দার নায়করা বাস্তব জীবনেও নায়ক হয়ে ওঠেন কখনো নিজের সাহসে, কখনো পরিবারের ভালোবাসায়।