মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাম্প্রতিক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দেশের অনেক মানুষকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। বিশেষ করে যাঁরা এক সময় শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন, তাঁদের বেদনা যেন আরও গভীর। সেই অনুভব থেকেই নিজের কষ্টের কথা জানালেন গুণী অভিনয়শিল্পী দিলারা জামান।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি জাতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে দিলারা জামান বলেন, ‘বাচ্চাদের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। কান্না থামাতে পারছি না। কী দেখছি এসব! ছবি–ভিডিও… এমন দৃশ্য দেখে গা শিউরে উঠছে। নিজেও তো একজন শিক্ষক ছিলাম। শিক্ষার্থীদের এমন মৃত্যুতে বুক ভেঙে যাচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষিকার মৃত্যু আমাকে পোড়াচ্ছে।’
দীর্ঘ ২৬ বছর শিক্ষকতা করেছেন দিলারা জামান। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক ছিলেন তিনি। পরে পুরোপুরি অভিনয়ে যুক্ত হন। আশির ঘরে পা রাখা এই শিল্পী এখনো নিয়মিত অভিনয়ে যুক্ত রয়েছেন। তিনি থাকেন ঢাকার উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরে। সেই এলাকার পাশেই অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। দিলারা জামান বলেন, ‘প্রতিদিন যাতায়াতের পথে স্কুলটির সামনে দিয়ে যাই। কী সুন্দর কমপ্লেক্স! বাচ্চারা হাসিখুশি মুখে স্কুলে ঢোকে–বের হয়, আশপাশের পরিবেশটা সবসময় প্রাণবন্ত থাকত।’
কিন্তু বিমান দুর্ঘটনার ঘটনার পর থেকে পুরো পরিবেশই পাল্টে গেছে। তিনি বলেন, ‘কোনো ছবি বা ভিডিও দেখতে পারছি না। খুব খারাপ লাগছে। আমি প্রতিদিন যে মাঠে হাঁটতে যাই, সেখানে এখন শুধু এই দুর্ঘটনার কথাই শুনছি। সবার মুখে বিষণ্নতা। আমার নিজেরও চোখ বারবার ভিজে যাচ্ছে।’
শিক্ষিকার আত্মত্যাগের কথা বলতে গিয়ে কণ্ঠ ধরে আসে তাঁর, ‘যেভাবে শিক্ষিকা বাচ্চাদের বাঁচাতে গিয়ে নিজের প্রাণ দিলেন, তা ভাবলেই ভেতরটা হু হু করে ওঠে। শিক্ষক তো বাচ্চাদের নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসেন।’
তিনি জানান, তাঁর মেয়ে কানাডা থেকে দেশে এসেছেন। মেয়ে তাঁকে বাইরে একটু হাঁটতে যেতে বললে তিনি পার্কে গিয়েছিলেন। সেখানেও চারপাশে কেবল বিষাদময় আলোচনা। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও শিক্ষক ছিলাম, তাই এই মৃত্যু আমাকে অন্যভাবে কষ্ট দিচ্ছে।’
জানান, ঢাকাসহ দেশের চারটি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। শেষ দিকে একটি স্বনামধন্য স্কুলে পড়ালেও দলাদলির কারণে চাকরি ছাড়তে হয়। পরে অভিনয়ে পুরোপুরি যুক্ত হয়ে পড়েন।
তার ভাষায়, ‘অভিনেত্রী দিলারা জামানের আড়ালে কোথাও অভিমানী শিক্ষিকা দিলারা জামান রয়ে গেছেন—দূর থেকে ছাত্রদের সাফল্য দেখে খুশি হন, আবার এমন করুণ মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন।’