‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এর লামিয়া হিসেবে যাকে চেনেন সবাই, তাঁর আসল নাম লামিমা লাম

নাম লামিমা লাম হলেও দর্শকের কাছে তিনি এখন পরিচিত ‘লামিয়া’ নামে। জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছিলেন, আর সেই নাটকের চরিত্রটিই তাঁকে এনে দেয় আলাদা পরিচিতি, এনে দেয় ভালোবাসা। নাটকের মতোই বাস্তব জীবনেও ধীরে ধীরে গড়ে তুলছেন নিজের অভিনয়জগৎ। অভিনয় নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা, প্রস্তুতি, প্রিয় শিল্পী, অবসর কাটানোসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তরুণ অভিনেত্রী লামিমা লাম।

নোয়াখালী থেকে ক্যামেরার সামনে
২০২০ সালে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এর তৃতীয় মৌসুমের শুটিং চলছিল নোয়াখালীতে। নাটকের একটি চরিত্রের জন্য খোঁজা হচ্ছিল স্থানীয় আঞ্চলিক ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারা কাউকে। সেখানেই শুরু লামিমার অভিনয়ের যাত্রা।
“আমি তখন অভিনয় একেবারেই করিনি। শুধু জানতাম, নোয়াখালীর ভাষা বলতে পারি। অডিশন ভিডিও পাঠানোর পর সুযোগ পেয়ে যাই। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো, সংলাপ বলা, অভিনয়ের সবকিছুই নতুন ছিল। অমি ভাই (পরিচালক কাজল আরেফিন অমি) আর অন্যান্য সিনিয়ররা অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন। ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এর প্রতিটি দৃশ্যের আগে রিহার্সাল হতো, ওটাই ছিল আমার শেখার স্কুল।”

শুধু প্রথম ধাপ পেরিয়ে থেমে থাকেননি লামিমা। এরপর কাজ করেছেন ‘অসময়’, ‘টাকার মেশিন’, ‘হোটেল রিল্যাক্স’–এর মতো জনপ্রিয় কাজগুলোতে। প্রশংসা পেয়েছেন, পেয়েছেন নিজস্ব দর্শকগোষ্ঠী।
“প্রথম কাজেই দর্শক আমাকে লামিয়া নামে আপন করে নিয়েছে। এই ভালোবাসা নিয়ে আমি এগিয়ে যাচ্ছি।”

লামিয়া চরিত্রের সঙ্গে মিল?
নাটকে তাঁকে আমরা যেভাবে দেখি—প্রাণবন্ত, মজাদার, খোলামেলা—বাস্তবে কি তেমনই?
হাসতে হাসতে লামিমা বলেন, “নাহ, বাস্তব জীবনে আমি একেবারেই তার উল্টো। নাটকের লামিয়া খুবই বহির্মুখী, আমি বরং একটু অন্তর্মুখী। তবে একটা বিষয় মিল আছে—দর্শকের ভালোবাসা আমরা দুজনেই পেয়েছি। নির্মাতারাও লামিয়া চরিত্রে আস্থা রেখেছেন বলেই হয়তো এই চরিত্রটির এমন রূপ হয়েছে।”

চরিত্রে ঢোকার প্রস্তুতি কেমন?
প্রতিটি নতুন কাজেই নিজেকে ভাঙেন, গড়েন লামিমা। তাঁর ভাষায়,
“যেকোনো চরিত্রের জন্য চিত্রনাট্য ভালো করে পড়ি। চেষ্টা করি একটা কল্পনার জগৎ তৈরি করতে—চরিত্রটি কেমন কথা বলবে, তার ভাবভঙ্গি কেমন হবে, কীভাবে হাঁটবে, হাসবে। আগের কোনো চরিত্র যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখি। হয়তো সবসময় শতভাগ নিখুঁত হতে পারি না, কিন্তু প্রাণবন্ত অভিনয় দেওয়ার চেষ্টা করি।”

অভিনয়ের বাইরে অবসর কাটে কেমন করে?
অভিনয় নিয়ে ব্যস্ততা থাকলেও অবসরে নিজের মতো করে সময় কাটাতে ভালোবাসেন লামিমা। গান শোনা, সিনেমা-সিরিজ দেখা, ভ্রমণ—সবই তাঁর প্রিয়।
“বিদেশি সিনেমা দেখি, দেশি শিল্পীদের কাজ দেখি। যেহেতু আমি মঞ্চ থেকে আসিনি, রিয়েলিটি শোতেও ছিলাম না, তাই শেখার জায়গাটা একটু অন্যরকম। সহকর্মী বা সিনিয়রদের কাজ দেখি—কীভাবে সংলাপ বলে, এক্সপ্রেশন দেয়, সেটা বিশ্লেষণ করি। এর মধ্য দিয়েই নিজেকে তৈরি করছি।”

সর্বশেষ কী দেখেছেন?
সবশেষ দেখেছেন বিদেশি রোমান্টিক ছবি ‘সাইয়ারা’ ও দেশি ছবি ‘তাণ্ডব’।
“সাইয়ারা ছবির গানগুলো চমৎকার। নতুন দুই অভিনয়শিল্পীর ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে এমন এক গল্প দিয়ে—সেটা দেখে হিংসাও হয়েছে (হাসি)। তাণ্ডব ছবিতে জয়া আপুর অভিনয় দুর্দান্ত লেগেছে। ওনার এত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ভালো কাজ দেখে গর্ব হয়।”

প্রিয় অভিনেত্রী কারা?
“সবাই সহকর্মী, তাই কারও নাম আলাদাভাবে বলা কঠিন,” বললেও কিছু প্রিয় নাম উঠে আসে তাঁর মুখে।
“মেহজাবীন আপু, তানজিন তিশার কাজ নিয়মিত দেখি। ওনারা খুব পরিশ্রমী ও যত্নবান। তাঁদের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। এছাড়া আমাদের সময়ের যারা অভিনয় করছেন, তাঁদের কাজও উপভোগ করি।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নতুন নতুন চরিত্রে নিজেকে দেখাতে চান লামিমা। দর্শকদের সামনে প্রতিবার যেন ভিন্নরূপে হাজির হতে পারেন—এটাই তাঁর লক্ষ্য।
“আমি চাই, মানুষ প্রতিবার নতুন কিছু দেখুক। একই ধরনের চরিত্রে কাজ করে যেতে চাই না। অভিনয়ে নিজেকে আরও পরিণত করতে চাই, যেন দর্শক বিশ্বাস করতে পারেন—এটাই চরিত্র।”

‘লামিয়া’ চরিত্রের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলেও এখন তিনি নিজস্ব একটি পরিচয় গড়ে তুলছেন—লামিমা লাম হিসেবে। সেই পরিচয়ের পেছনে আছে নিষ্ঠা, অধ্যবসায় আর শেখার আগ্রহ। সময় বলবে, এই অভিনয়যাত্রা কোথায় গিয়ে পৌঁছায়। তবে আপাতত দর্শকের ভালোবাসা ও নিজের পরিশ্রমকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাচ্ছেন এই তরুণ অভিনেত্রী।