‘মৃত্যু এড়ানোর পথ কেউ আজও খুঁজে পায়নি, ভবিষ্যতেও পাবে না’
মার্ভেল সিনেমেটিক ইউনিভার্সের ‘থর’ মানেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক নরডিক দেবতা—হাতুড়ি হাতে ঝড় তোলা সুপারহিরো। এই চরিত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে অস্ট্রেলীয় অভিনেতা ক্রিস হেমসওয়ার্থ। তবে পর্দার এই ‘গড অব থান্ডার’ এবার মন দিয়েছেন নিজের বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জগুলোয়, যেখানে প্রতিপক্ষ আর কোনও সুপারভিলেন নয়—সেটা ভয়, বয়স, কিংবা ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের তথ্যচিত্র সিরিজ ‘লিমিটলেস’-এর দ্বিতীয় মৌসুমে আবার ফিরেছেন হেমসওয়ার্থ। আগের মতো এবারও নিজেকে নতুনভাবে চেনা ও জীবনকে গভীরভাবে উপলব্ধি করাই তাঁর উদ্দেশ্য। বয়স ৪১ হলেও হেমসওয়ার্থ এবার মুখোমুখি হচ্ছেন এমন সব পরীক্ষার, যা সিনেমার চেয়ে কম উত্তেজনাপূর্ণ নয়।
“প্রথম মৌসুমটা আমাকে প্রায় শেষ করে দিয়েছিল। তখনই ঠিক করেছিলাম, আর করব না!”—হাসতে হাসতে বলছিলেন তিনি বিবিসির এক সাক্ষাৎকারে। সেই মৌসুমে তিনি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন ফ্রি-ডাইভিং, দীর্ঘ উপবাস, মানসিক চাপের প্রশিক্ষণ, আর ৯০০ ফুট ওপরে ক্রেন ধরে হাঁটার মতো কাজের—সবই বার্ধক্য রোধের উদ্দেশ্যে।
তবু কেন আবার ফিরলেন এমন কঠিন শোয়ে? হেমসওয়ার্থ বলেন, “কারণ, আমার মনে তখনও অনেক প্রশ্ন ছিল। ক্লান্তি ছিল, কিন্তু শেষে একধরনের প্রশান্তি পেয়েছি।”
দ্বিতীয় মৌসুমে শারীরিক চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি এবার তিনি অন্বেষণ করেছেন সৃজনশীলতা ও সম্পর্কের গভীরতা। বন্ধু এড শিরানের সাহায্যে জীবনে প্রথমবার বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখেছেন, আবার সন্তানদের দুঃসাহসিকতা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে উঠে পড়েছেন ৬০০ ফুট উঁচু এক আলপাইন বাঁধে। “ভয় আর অনিশ্চয়তা যেখানে বেশি, সেখানেই বোঝা যায় জীবন কতটা ভঙ্গুর”—বলছিলেন তিনি।
তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা তিনি খেয়েছেন প্রথম মৌসুমের শুটিং চলাকালীন—জেনেটিক টেস্টে ধরা পড়ে তাঁর শরীরে এমন দুটি জিন রয়েছে, যা তাঁকে আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৮–১০ গুণ বাড়িয়ে দেয়। “এই সতর্কসংকেত আমাকে নিজেকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে শেখায়। মনে হয়েছিল, যদি আমি এই ব্যাপারে কথা বলি, তাহলে আরও মানুষ সচেতন হবে,”—বলেছেন হেমসওয়ার্থ।
চিরজীবন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নিয়ে নানা আলোচনা থাকলেও হেমসওয়ার্থ এসব ব্যাপারে তেমন আস্থা রাখেন না। তাঁর বক্তব্য, “মৃত্যু এড়ানোর পথ কেউ আজও খুঁজে পায়নি, ভবিষ্যতেও পাবে না। তাই মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করাই শ্রেয়। ভাবুন তো কেউ যদি বলে দেয় আপনি ২০০ বছর বাঁচবেন—তাহলে মানুষ জীবনের প্রতি আরও অসতর্ক হয়ে পড়বে। বরং মৃত্যুর ভয়ই আমাদের মুহূর্তগুলোকে মূল্য দিতে শেখায়।”
মৃত্যু নিয়ে আলোচনা থেকেই আসে পরিবার প্রসঙ্গ। হেমসওয়ার্থ মনে করেন, মানুষ যদি কখনো না মরত, তবে সম্পর্কগুলো আর মূল্য পেত না। অথচ নিজের জীবনে তিনি পরিবারকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন—অভিনেত্রী এলসা পাটাকির সঙ্গে তাঁর বৈবাহিক জীবন আর তাঁদের তিন সন্তানই তাঁর জীবনের কেন্দ্রবিন্দু।
‘লিমিটলেস’-এর নতুন মৌসুমে দেখা যাবে, কীভাবে হেমসওয়ার্থের বেছে নেওয়া পথ শুধু তাঁকেই নয়, তাঁর পরিবার ও চারপাশের মানুষদের জীবনেও প্রভাব ফেলেছে।
তথ্যচিত্রটির দ্বিতীয় মৌসুম মুক্তি পাচ্ছে ১৫ আগস্ট, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ডিজনি প্লাস ও হুলুতে।