টানা কয়েক মাস যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পারসা ইভানা। আম্মুর কাছে থাকায় তাঁর বিদেশযাপন অনেকটাই ঘরোয়া ছিল। ছোটবেলার বন্ধুরা পাশে ছিল, ঘোরাঘুরি করেছেন, আবার নাচ ও অভিনয়ের কর্মশালায়ও অংশ নিয়েছেন। নিউইয়র্কের দ্য ফ্রিম্যান স্টুডিওতে তিন মাসের অভিনয় কোর্স এবং স্টেপস অন ব্রডওয়েতে নাচের ওপর ১৫টি কর্মশালা শেষ করেছেন তিনি।
ভরতনাট্যমে পুরস্কারপ্রাপ্ত ইভানা ২০১৪ সালে ‘চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে প্রতিযোগিতা’র চ্যাম্পিয়ন হলেও শেখার প্রতি তাঁর আগ্রহ এখনও প্রবল। এর আগেও লন্ডনে আকরাম খানের কাছ থেকে নাচের তালিম নিয়েছিলেন। তাঁর মতে, শেখার কোনো শেষ নেই, শিল্পীকে সবসময় নতুন কিছুর সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়। অনেকে তাঁকে নাচ শেখানোর অনুরোধ করলেও তিনি নিজেকে শিক্ষক হিসেবে দেখেন না। তবে ভবিষ্যতে হয়তো ছোটখাটো কর্মশালা পরিচালনা করতে পারেন।
অভিনয়ে আসার পেছনে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার অবদান তেমন ছিল না বলে জানান ইভানা। পরিচালকদের কাছ থেকে, সিনিয়রদের কাজ দেখে এবং সিনেমা ও বই থেকে যা শিখেছেন, তাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন। তবু অভিনয়ের কর্মশালা তাঁকে নতুনভাবে ভাবিয়েছে। তাঁর ভাষায়, অভিনয়ে শুধু প্রতিভা নয়, এর পেছনে শৃঙ্খলা, ধৈর্য আর ম্যানার্স জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রে করা ‘বিহাইন্ড দ্য ক্যামেরা অ্যান্ড প্রিপারেশন’ কোর্সটি তাঁকে বিশেষভাবে শিখিয়েছে ধৈর্য ধরতে।
দীর্ঘ সময় পর মায়ের কাছে ফিরে গিয়ে পেয়েছেন ভরপুর যত্নআত্তি। রান্নার কোর্স করা মা নানারকম খাবারের প্র্যাকটিক্যাল প্রয়োগ করেছেন তাঁর ওপর। বন্ধুরাও সেই রান্নার স্বাদ পেয়েছে। অবাক করা বিষয় হলো, এত খেয়েও ইভানার ওজন বাড়েনি। তবে রান্নায় তাঁর কোনো আগ্রহ নেই, নিজেই হাসতে হাসতে বলেন, রান্না একেবারেই পছন্দ নয় তাঁর।
অন্যদিকে নাচ, গান আর অ্যাডভেঞ্চার তাঁকে ভীষণ টানে। প্রচুর গান শোনা, গুনগুন করে গাওয়া আর নানা রকম অ্যাকটিভিটি তাঁর জীবনের অংশ। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি রোলার কোস্টারে বারবার উঠেছেন, করেছেন হেলিকপ্টার রাইড। তাঁর সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হলো বিমান থেকে লাফ দেওয়া ঠিক যেমনটা ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’ সিনেমায় দেখানো হয়েছে। এটিকে তিনি জীবনের হায়েস্ট অ্যাডভেঞ্চার ড্রিম বলে মনে করেন। কয়েক বছর আগে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে স্কুবা ডাইভিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়েছিলেন, যদিও পানিকে ভয় পান বলে সেটা তাঁর জন্য বেশ ভয়ের ছিল। সম্প্রতি আবার চালকবিহীন গাড়িতে চড়েছেন, যেটাও ছিল রোমাঞ্চকর।
ভ্রমণের প্রতি টানও তাঁর দারুণ প্রবল। ভবিষ্যতে সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, মরক্কো আর শ্রীলঙ্কা ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে তাঁর। মেয়েবন্ধুদের সঙ্গে মিলে ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কায় গার্লস ট্রিপের পরিকল্পনাও করেছেন। তবে সবচেয়ে স্মরণীয় ভ্রমণ তাঁর কাছে স্কটল্যান্ড। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে লন্ডনে কাজিনের কাছে ছিলেন, সেখান থেকে একাই স্কটল্যান্ড ভ্রমণে গিয়েছিলেন। প্রথমবার স্নোফল দেখে তাঁর চোখে পানি এসে যায়। অচেনা শহরে একা ভ্রমণ তাঁর মনে ভিন্ন অভিজ্ঞতা তৈরি করে। ঐতিহাসিক শহরের প্রাচীন স্থাপত্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি, আর নিজের সঙ্গে নিজের সময় কাটানোর সুযোগও পেয়েছিলেন।
কাজের ক্ষেত্রে এখনো নাটক বা সিনেমায় ফিরতে পুরোপুরি প্রস্তুত নন ইভানা। আপাতত ফটোশুট নিয়েই ব্যস্ত। নাটকের বেশ কিছু চিত্রনাট্য হাতে পেলেও এখনো এমন কোনো গল্প খুঁজে পাননি যেটা তাঁকে টানবে। তাঁর ইচ্ছা নাটক, ওটিটি ও সিনেমা সব জায়গাতেই কাজ করার। তবে সেটি নির্ভর করছে ভালো গল্প ও পরিচালকদের সিদ্ধান্তের ওপর।