ভারতের জনপ্রিয় টেলিভিশন অভিনেত্রী ও রাজনীতিবিদ স্মৃতি ইরানির জীবন যেন এক রূপকথার গল্প। জীবনের শুরুতে চরম দারিদ্র্য ও প্রত্যাখ্যানের শিকার হয়েও তিনি হাল ছাড়েননি। একসময় রেস্তোরাঁয় বাসন মেজেছেন, অথচ সেই তিনিই পরে হয়ে উঠেছিলেন ভারতের অন্যতম সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া টেলিভিশন তারকা এবং দেশের একজন মন্ত্রী।

কঠোর জীবনসংগ্রাম

১৯৭৬ সালে দিল্লিতে জন্ম নেওয়া স্মৃতি মালহোত্রার শৈশব কেটেছে দারিদ্র্যের মধ্যে। তিন বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন তিনি। সীমিত আয়ের কারণে কলেজ ছাড়তে হয় এবং পরিবারের হাল ধরতে নানা কাজ করতে শুরু করেন। জীবনের প্রথম দিকে তিনি এয়ার হোস্টেস হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু “ব্যক্তিত্ব নেই” বলে তাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। এরপর জীবিকার তাগিদে তিনি ভারতের প্রথম ম্যাকডোনাল্ডসে ক্লিনার হিসেবে যোগ দেন, যেখানে তার মাসিক বেতন ছিল মাত্র ১,৮০০ রুপি।

একতা কাপুরের হাত ধরে সাফল্য

অভিনেত্রী হওয়ার জন্য একের পর এক অডিশনে ব্যর্থ হওয়ার পর তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেন প্রযোজক একতা কাপুর। একতার মা স্মৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে একটি সুযোগ দেওয়ার কথা বলেন, যার ফলস্বরূপ ২০০০ সালে তিনি ‘কিউকি সাস ভি কাভি বহু থি’ সিরিয়ালে ‘তুলসী বিরানি’ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। এই চরিত্রটি তাকে রাতারাতি ভারতের ঘরে ঘরে জনপ্রিয় করে তোলে।

সাফল্যের শিখরে

এই সিরিয়ালটি এতটাই সফল হয় যে, তিন মাসের মধ্যেই এটি টিআরপি তালিকার শীর্ষে উঠে আসে। একসময় দিনে ১,২০০ রুপি পারিশ্রমিক পেতেন স্মৃতি। ধীরে ধীরে তিনি টেলিভিশনের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রীতে পরিণত হন।

অভিনয়ের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তিনি রাজনীতির ময়দানেও পা রাখেন এবং ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে নির্বাচনে লড়েন। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। দারিদ্র্য ও ব্যক্তিগত সংগ্রামের অভিজ্ঞতা তাকে সাধারণ মানুষের কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। স্মৃতি ইরানির জীবন প্রমাণ করে, দৃঢ় সংকল্প থাকলে কোনো বাধাই সাফল্য আটকাতে পারে না।