১৯ বছর পর ‘ভালোবাসবো বাসবোরে বন্ধু’ গান নিয়ে আবেগঘন স্মৃতি শেয়ার করলেন হাবিব

২০০৬ সালের ১৮ আগস্ট মুক্তি পেয়েছিল এস এ হক অলিক পরিচালিত বহুল আলোচিত চলচ্চিত্র ‘হৃদয়ের কথা’। রিয়াজ-পূর্ণিমা অভিনীত এ ছবিটি মুক্তির পরই দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয়ে ঝড় তোলে। ছবির গল্প, অভিনয়, নির্মাণশৈলী যেমন প্রশংসিত হয়েছিল, তেমনি এর গানগুলোও পেয়েছিল অগাধ জনপ্রিয়তা। ছবির মুক্তির আগে বাজারে আসে এর অডিও অ্যালবাম, যা আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল দর্শকদের মাঝে। বিশেষ করে দুইটি গান হাবিব ওয়াহিদের কণ্ঠে ‘ভালোবাসবো বাসবোরে বন্ধু’ এবং এস আই টুটুলের কণ্ঠে ‘যায় দিন যায় একাকী’ ছবির মুক্তির আগেই ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।


‘ভালোবাসবো বাসবোরে বন্ধু’ গানের মাধ্যমে প্রথমবার চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন হাবিব ওয়াহিদ। জুয়েল মাহমুদের কথায় গানটি শুধু দর্শকের ভালোবাসাই কুড়ায়নি, হাবিবকে এনে দেয় মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়কের সম্মাননা। ১৯ বছর পর গানটি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে স্মৃতিচারণা করেছেন তিনি।

গানটির জন্মকথা
২০০০-এর দশকের শুরুতে হাবিব ওয়াহিদ বাংলা সংগীতে নতুন এক ধারা আনেন। তাঁর প্রকাশিত ‘কৃষ্ণ’ ও ‘মায়া’ অ্যালবাম তুমুল আলোড়ন তোলে। লোকগানকে আধুনিক সুরের সঙ্গে মিশিয়ে ভিন্ন স্বাদের গান উপহার দেন তিনি। ‘কৃষ্ণ’, ‘আমি কূলহারা কলঙ্কিনী’, ‘কেমনে ভুলিব আমি’, ‘কালা’ এসব গান তরুণদের মুখে মুখে ফিরতে থাকে।

ঠিক এমন সময়ে ‘হৃদয়ের কথা’ ছবির জন্য গান করার প্রস্তাব পান হাবিব। সিনেমার জন্য প্রথমবার সংগীতায়োজন ও প্লেব্যাক তাঁর কাছে ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি মাত্র তিন-চার দিনের মধ্যেই গানটি তৈরি করেন। এরপর ছবির পরিচালক এস এ হক অলিক ও প্রযোজককে ডাকা হয় স্টুডিওতে। গানটি শোনার পরই সবাই অভিভূত হন।

এ প্রসঙ্গে হাবিব বলেন
“তাঁদের অভিব্যক্তি দেখে মনে হয়েছিল, তাঁরা এত ভালো কিছু আশা করেননি। হয়তো আগের অ্যালবামগুলো শুনেই আমার কাছে এসেছিলেন, কিন্তু তাঁদের এক্সপেক্টেশন এরকম ছিল না।”

বাবার প্রতিক্রিয়া, জীবনের সেরা স্মৃতি
গানটি নিয়ে হাবিবের জীবনে ঘটে যায় একটি অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফেরার পথে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তাঁর বাবা, কিংবদন্তি শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ। গাড়িতে বসে প্রথমবার বাবাকে শোনান গানটি। গান শোনার পরই হাবিব ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম থেকে জেগে বাবাকে জিজ্ঞেস করেন, কেমন লাগল গানটি। ফেরদৌস ওয়াহিদ উত্তর দেন
“হাবিব, তুমি এটা কী বানালে? আমি তো টানা ২৮ বার শুনলাম।”

এই প্রতিক্রিয়া আজও গায়ে কাঁটা দেয় হাবিবের। তিনি বলেন
“এটা জীবনের সবচেয়ে সুখের স্মৃতি। অনেক গান নিয়েই প্রশংসা পেয়েছি, তবে এইটা বিশেষ। শুধু ক্যারিয়ারের নয়, পুরো জীবনের।”

সময়ের সীমানা পেরিয়ে
গানটি শুধু সিনেমার গান হিসেবেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। মুক্তির পর পোস্টার, বিজ্ঞাপন সব জায়গায় গানটির নামই প্রধান হয়ে ওঠে। বলা যায়, গানটি ছবির সাফল্যকে ছাপিয়ে গিয়েছিল।

বর্তমানে গানটি অনুপম মুভি সং ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে এবং ভিউ পেরিয়েছে ৫ কোটির বেশি। এখনও শ্রোতাদের মুখে মুখে ফিরছে গানটি, আর হাবিব ওয়াহিদের কাছে এটি তাঁর ক্যারিয়ারের এক টার্নিং পয়েন্ট।