আমার যেন ডানা আছে, কিন্তু উড়তে পারছি না—জীবন ও একাকিত্ব নিয়ে তমা মির্জা


তমা মির্জা; ছবি-অভিনেত্রির ফেসবুক থেকে নেয়া

নৃত্য দিয়ে বিনোদন দুনিয়ায় যাত্রা শুরু করলেও তমা মির্জা এখন নিজেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের একজন নিবেদিতপ্রাণ শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে তাঁর অভিনয় তাঁকে এনে দিয়েছে দর্শকের ভালোবাসা এবং সমালোচকদের প্রশংসা। এরই ধারাবাহিকতায় শিহাব শাহীনের পরিচালনায় ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘দাগি’ এবং চরকিতে প্রচারিত ‘আমলনামা’ তাঁকে আবারও আলোচনায় আনেন।

তবে এই দুই প্রশংসিত কাজের পর তমার নতুন কোনো কাজের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে এখনই কিছু বলতে চাই না। কয়েকটি ছবির বিষয়ে আলাপ চলছে। কোনটা আগে শুরু করব, সেটা ঠিক হয়নি। তবে ভালো কিছুই হবে।’

‘দাগি’ ও ‘আমলনামা’ তাঁর অভিনয়জীবনে বিশেষ মাত্রা এনেছে বলেও মনে করেন তিনি। ‘ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া একজন শিল্পীর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি চেষ্টা করছি প্রতিটি চরিত্রে নতুন কিছু দেওয়ার।’—বললেন তমা।

চলচ্চিত্রে বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজের পরেও কাজের অনিয়মিততা নিয়ে কিছুটা হতাশ তমা। বলেন, ‘আমার যেন দুটো ডানা আছে, কিন্তু উড়তে পারছি না। শিল্পী হিসেবে বছরে তিন থেকে চারটি ভালো মানের কাজ থাকলে তা শিল্পী ও দর্শক—উভয়ের জন্যই ইতিবাচক।’

‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ ও ‘৭ নাম্বার ফ্লোর’-এর মতো কাজ দিয়ে নিজের অবস্থান  মজবুত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার অভিনয়ে এখন অনেক পরিপক্বতা এসেছে। দর্শক সেটি বুঝতে পারছেন। তাঁদের ভালোবাসা ও প্রশংসা আমার অনুপ্রেরণা।’

বর্তমানে কোনো সিনেমার শুটিংয়ে নেই তমা। সময় কাটাচ্ছেন নতুন গল্প শোনা, সিনেমা দেখা এবং নিজেকে সময় দেওয়ার মধ্যে দিয়ে। তিনি জানান, সম্প্রতি একটি বিদেশি ছবি ‘সাইয়ারা’ দেখে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছেন। ‘ছবির নায়িকার এক্সপ্রেশন দেখে ভাবছিলাম, আমি পারব কি না এমনভাবে ফুটিয়ে তুলতে।’

অভিনয়ের বাইরে নিজের রান্নার প্রতি ভালোবাসার কথাও জানালেন তমা। বলেন, ‘রান্না একটা আর্ট। গরু, মুরগি, হাঁস সবকিছুর মাংসের কারি ভালো রান্না করতে পারি। এটা আমার কাছে আনন্দের।’ তবে রান্নার চেয়েও একা সময় কাটানো তাঁর কাছে বেশি প্রিয়। ‘এক কাপ চা হাতে নিয়ে নিজের সঙ্গে ভাবি, কী ভুল করেছি, কেন করেছি, কীভাবে শোধরানো যায়। এই একাকিত্ব আমাকে নতুন করে ভাবতে শেখায়।’

অভিনেতা ও নির্মাতা রায়হান রাফীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে অনেক দিন ধরেই গুঞ্জন রয়েছে। তবে তমা এই প্রসঙ্গে স্পষ্ট করে বলেন, ‘“সুড়ঙ্গ”র পর বড় পর্দায় আমাদের আর কোনো কাজ হয়নি। ওটিটিতে একটি কাজ হয়েছে ঠিকই, তবে আপাতত আমাদের একসঙ্গে কাজের সম্ভাবনা নেই।’ তাঁর ভাষায়, ‘তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন খুব একটা ব্যক্তিগত থাকে না। তবে বলছি, রাফীর সঙ্গে অফস্ক্রিনে আমাদের কিছু নেই, অনস্ক্রিনেও আপাতত কিছু হচ্ছে না।’

সম্পর্ক এবং বিয়ে নিয়ে তমা বলেন, ‘প্রেম, বন্ধুত্ব কিংবা আড্ডা—এসবকে আমি জীবনের স্বাভাবিক অংশ হিসেবেই দেখি। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলায়। আমি আমার মতো করে এগোচ্ছি।’ বিয়ে প্রসঙ্গে বলেন, ‘সংসার করতে হলে মনস্থির করতে হয়। কাউকে বিয়ে করে সংসার করব—এমন মানুষ এখনো পাইনি। জীবনের যেসব সময়ে প্রেম এসেছে, তখন ভেবেছি সংসার করব। এখন তেমন কাউকে পাচ্ছি না। তবে হঠাৎ এমন কেউ আসতে পারে, যার সঙ্গে মনে হবে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব—তখনই হয়তো বিয়ে করব।’

চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী তমা মির্জা। আপাতত অভিনয়ই তাঁর সবচেয়ে বড় ধ্যানজ্ঞান। সময় সুযোগ হলে হয়তো আবার নতুন কোনো চরিত্রে নিজেকে তুলে ধরবেন, অপেক্ষায় থাকবেন দর্শকও।