২০০ বছরের পুরোনো দানব ফিরল পর্দায়! দেল তোরোর ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’-এ কে আসল ‘মনস্টার’?
তিনি যখন দানব বানান, তখন তাতে থাকে না শুধু ভয়- থাকে নিদারুণ মানবিকতা। বহু বছর ধরে গিয়ের্মো দেল তোরোর যে স্বপ্ন ছিল, সেই ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ অবশেষে মুক্তি পেল নেটফ্লিক্সে। কিন্তু এই গথিক হরর ছবিতে সবচেয়ে বড় চমক জ্যাকব এলর্ডি।

গিয়ের্মো দেল তোরো হলেন সেই পরিচালক, যিনি ‘প্যান’স ল্যাবিরিন্থ’ বা ‘দ্য শেপ অব ওয়াটার’-এর মতো সিনেমাতে দেখিয়েছেন, কীভাবে দানবের চেয়ে মানুষই বেশি ভয়ংকর হতে পারে। ২০০ বছরেরও আগে মেরি শেলির লেখা উপন্যাসটিকে পর্দায় আনাটা ছিল তাঁর বহুদিনের স্বপ্ন।

দেল তোরো নিজেই একসময় বলেছিলেন, “আমি স্বপ্ন দেখি সর্বকালের সেরা ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ বানাতে পারি।” সেই স্বপ্ন অবশেষে বাস্তব হলো ৭ নভেম্বর, যখন নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেল তাঁর ড্রিম প্রজেক্ট ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’।

এই সিনেমার মূল আকর্ষণ দুটি চরিত্র- নির্মাতা ভিক্টর ফ্রাঙ্কেনস্টাইন এবং তার সৃষ্টি দানব।

উন্মাদ বিজ্ঞানী: ভিক্টরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অস্কার আইজ্যাক, যিনি যেন উন্মাদ উচ্চাকাঙ্ক্ষা, ক্ষোভ আর হতাশার এক নিখুঁত মিশ্রণ। সন্তানের মৃত্যুতে বাবার কঠোর আচরণই ভিক্টরকে প্রকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে উৎসাহিত করে। আইজ্যাকের পরিমিত অভিনয় এই ‘ম্যাড ডক্টর’-এর চরিত্রটিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে।

মানবিক দানব: কিন্তু সব আলো কেড়ে নিয়েছেন জ্যাকব এলর্ডি (দানবের চরিত্রে)। তাঁর নীলচে ত্বক, যেন সদ্য মৃতদেহের মতো, আর তাঁর চোখদুটো যেন হাজার যন্ত্রণার ভাষা বলছে। এলর্ডি দানবের চরিত্রে এক অদ্ভুত সংবেদনশীলতা এবং কোমলতা ফুটিয়ে তুলেছেন। বিশেষ করে একটি দৃশ্যে যখন সে ইঁদুরকে ধরে আদর করে, তখন দর্শকের চোখ ফেরানো কঠিন। শিশু, পশু আর মনস্টারের মিশেলে গড়া এই সংবেদনশীল রূপটিই এই ছবির ট্র্যাজেডি।

এছাড়া, ভিক্টরের বাগ্‌দত্তা এলিজাবেথ চরিত্রে মিয়া গথ এবং মেন্টরের চরিত্রে ক্রিস্টফ ওয়াল্টজ-ও নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন।

দেল তোরোর এই সিনেমাটি ১৮১৮ সালের উপন্যাসের কাছাকাছি থেকেও সম্পূর্ণ নতুন এক ভিক্টোরিয়ান দুনিয়া তৈরি করেছে। তামারা ডেভেরেল-এর সেট ডিজাইন এবং কেট হাওলি-এর কস্টিউম ডিজাইন বারবার চমকে দেয়। ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দেহ যেন একত্রিত প্লেটের মতো, আর এলিজাবেথের পোশাকের সবুজ-নীল দীপ্তি চোখ টানে।

পরিচালকের প্রিয় লাল ও কালো রঙের ব্যবহার সিনেমার প্রতিটি ফ্রেমে যেন এক গথিক রহস্যের আবহ তৈরি করেছে।

ছোট্ট কিছু দুর্বলতা (যেমন নেকড়ের দৃশ্য বা মাঝে মাঝে সিনেমার গতি মন্থর হওয়া) সরিয়ে রাখলে এই ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ চলতি বছরের সেরা সিনেমাগুলোর মধ্যে একটি।

এটি শুধু একটি হরর সিনেমা নয়, বরং রোমান্স আর ট্র্যাজেডির এক দার্শনিক মিশেল। সিনেমা শেষে সেই অবধারিত প্রশ্নটিই জাগে- ভিক্টর নাকি মনস্টার; কে প্রকৃত দানব?