কাঁঠাল’: ব্যতিক্রমী গল্পে জাতীয় পুরস্কারজয়ী সিনেমা

2023 সালে বলিউডে ছিল এক অনন্য বছর। এই বছর বলিউডের বিখ্যাত তারকার দৃশ্যপট শোভিত হলেও একটি অনন্য সিনেমা নজর কেড়ে নিয়েছে সকলের। সেটি হলো ‘কাঁঠাল: আ জ্যাকফ্রুট মিস্ট্রি’—একটি ব্যতিক্রমী ও সমালোচকদের প্রশংসিত সিনেমা, যা মুক্তি পায় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। এই সিনেমার মূল বিষয়বস্তু এবং নির্মাণশৈলী এতটাই অভিনব যে, শেষ পর্যন্ত এটি ভারতের ৭১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা হিন্দি ফিচার ফিল্মের স্বীকৃতি লাভ করে। এই পুরস্কার অর্জন বর্তমান বলিউডের নির্মাণ ও ভাবনার ক্ষেত্রে এক বিশাল পরিবর্তনের সূচনা বলে বিবেচিত হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হলো, এই অনন্য সিনেমাটি কীভাবে এত জনপ্রিয় ও স্বীকৃতি পেল? প্রথমেই উল্লেখ করা দরকার যে, ‘কাঁঠাল’ মূলত একটি ছোট বাজেটের সিনেমা, অপ্রচলিত অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কোনও শোবিজ তারকা ছাড়াই নির্মিত হয়। এটি ছিল একটি মৌলিক চিন্তার উপরে নির্মিত, যা সমাজের নানা জটিলতা ও রাজনৈতিক বাস্তবতা ব্যাঙ্গ করে প্রকাশ করেছে। এই সিনেমার মূল উপজীব্য হলো, এক বিধায়কের আঙিনা থেকে দুর্লভ দু’টি আংКেল হং প্রজাতির কাঁঠাল চুরি হওয়ার ঘটনা। এই ছোট ঘটনাটি পরবর্তীতে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যঙ্গ আর অবাক্ষরতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।

সিনেমার গল্প অনুযায়ী, এই চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় এক নিরবচ্ছিন্ন তদন্ত, যেখানে পুলিশ অফিসার মহিমা বসু (অভিনয় করেছেন সানিয়া মালহোত্রা) এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে তার শক্তি ও সাহসের পরিচয় দেন। এই চরিত্রে তিনি বিশেষভাবে দক্ষতার সঙ্গে নিজেকে উপস্থাপন করেন, যা কেবল তার অভিনয়ের প্রশংসা অর্জন করেনি, বরং তার বাস্তব জীবনের দৃঢ়তা ও দক্ষতা ও তার চরিত্রের সংযোগও দেখিয়েছে। সিনেমায় তিনি একজন আত্মবিশ্বাসী, কিন্তু সংবেদনশীল নারী পুলিশ। মহিমার চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে তিনি বাস্তব জীবনের নারী পুলিশের সঙ্গে সময় কাটিয়ে নিজেকে আরও আরও যোগ্য করে তুলেছেন। সংলাপের মাধ্যমে, তার আঞ্চলিক ভাষা শেখা এবং চরিত্রের বৈচিত্র্য তুলে ধরার জন্য তার প্রশংসা করা হয়েছে।

‘কাঁঠাল’-এর নির্মাতা যশবর্ধন মিশ্রা এই সিনেমা নির্মাণ করেন। তিনি এমন একটি সিনেমা উপহার দিয়েছেন, যা শুধু হাস্যরসে ভরা নয়, বরং সমাজের মূল সমস্যা, প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও ক্ষমতার দম্ভের কূটকৌশলগুলো ব্যঙ্গ করে তুলে ধরেছে। সিনেমার উপকথায় দেখা যায়, এক আঙুল ক্ষুদে চুরির ঘটনাকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে জাতীয় ও স্থানীয় রাজনীতি, মিডিয়া নাটকীয়তা ও প্রশাসনিক দুর্বলতার প্রণিধান। এই ছোট ঘটনাটিকে উদ্দেশ্য করে নির্মিত এই সিনেমাটির প্রতিটি দৃশ্য এবং সংলাপ খুব যত্ন নিয়ে নির্মিত, যা দর্শকদের হাস্যরসের পাশাপাশি সমাজের সত্যের দিকেও আলোকপাত করে।

সিনেমার বিশেষত্ব হলো এর পার্শ্বচরিত্রগুলো। যেমন, রাজপাল যাদব চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনবদ্য অভিনেতা রাজপাল যাদব, যিনি একদিকে হাস্যরসের সৃষ্টি করেন, অন্যদিকে মিডিয়ার অন্ধ বানে উত্থিত দর্শকদের সংকট ও স্বার্থের দিকগুলো উন্মোচন করেন। আবার, রাজনীতিকের চরিত্রে বিজয় রাজ এক ‘শৌখিন’ নেতা, যিনি মনে করেন, কাঁঠাল উপহার দিলে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারপত্তর বেড়ে যাবে। তার এই চরিত্রে অভিনয় এতই বাস্তবপূর্ণ ও হো-হো করেছে যে, একঘেয়েমি বা বিরক্তি অনুভব হয়নি। একদম একটানা পুরো সিনেমার দৃশ্য উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।

একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে সানিয়া মালহোত্রা বলেছিলেন, “এই চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে আমি বুঝেছি, একজন নারী পুলিশ কিভাবে কাজ করেন, কিভাবে তার ব্যক্তিত্ব আর কর্মের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখেন। ইউনিফর্মের আড়ালে যে মানুষটি থাকে, আমি তাকে খুব ভালো