বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সারিকার জীবন যেন সিনেমার চিত্রনাট্যের মতোই নাটকীয়। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারানো, শৈশবেই কাজ শুরু করা, প্রেম, বিচ্ছেদ, আর সমাজের চোখে 'মন্দ নারী' হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরও তিনি নিজের শর্তে জীবনযাপন করেছেন। তার বর্ণাঢ্য এবং বিতর্কিত জীবন ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের এক আলোচিত অধ্যায়।
জীবনের শুরুতেই সংগ্রাম
সারিকার শৈশব কেটেছে কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবা চলে গেলে সংসারের হাল ধরতে তাকে শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করতে হয়। সুনীল দত্তের 'হামরাজ' (১৯৬৭) ছবিতে ছেলের চরিত্রে অভিনয় করে তার অভিনয় জীবনের শুরু। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তিনি কখনো স্কুলে যাননি এবং তার শৈশবের স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে। ছোটবেলায় তাকে দিয়ে আবেগঘন ও কষ্টের দৃশ্যে অভিনয় করানো হতো, যার পুরস্কার ছিল শুধু বিস্কিট ও চকলেট।
ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসা
মাত্র ১৫ বছর বয়সে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও ২১ বছর বয়সে তিনি ৬০ রুপি আর একটি গাড়ি নিয়ে নিজের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "যখন সত্যিই বাঁচার প্রয়োজন হয়, তখনই ভেতর থেকে সাহস চলে আসে।" জীবনের এই কঠিন সময়ে তিনি বন্ধুদের বাড়িতে স্নান করতেন আর গাড়িতে ঘুমাতেন। পরে, ২০১৭ সালে মায়ের মৃত্যুর পর জুহুর ফ্ল্যাট নিয়ে তাকে দীর্ঘ আইনি লড়াই করতে হয়।
কপিল দেব ও কমল হাসানের সাথে সম্পর্ক
তরুণ বয়সে ক্রিকেটার কপিল দেবের সঙ্গে সারিকার প্রেমের গুঞ্জন ওঠে, তবে সেই সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এরপর তার জীবনে আসেন দক্ষিণের সুপারস্টার কমল হাসান। সেই সময়ে কমল হাসান বিবাহিত ছিলেন। সমাজের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও তাদের সম্পর্ক গভীর হয় এবং সারিকা গর্ভবতী হন। ১৯৮৬ সালে জন্ম হয় তাদের প্রথম কন্যা শ্রুতি হাসান। এরপরও সমাজের সমালোচনার মুখে সারিকাকে 'মন্দ নারী' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সমালোচনার মুখে কমল হাসান সাংবাদিকদের সামনে বলেন, "এই সন্তান আমার।" এরপর ১৯৯১ সালে তাদের দ্বিতীয় কন্যা অক্ষরার জন্মের পর তারা বিয়ে করেন। তবে ২০০৪ সালে এই সম্পর্কও ভেঙে যায়।
দুই কন্যার চোখে সারিকা
মা-বাবার বিচ্ছেদ নিয়ে শ্রুতি হাসান এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "এটা বেদনাদায়ক। কিন্তু অশান্তির সংসারের চেয়ে আলাদা হওয়া অনেক ভালো।" সারিকার সঙ্গে তার দুই কন্যার সম্পর্ক খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, "মেয়েরা আমার বন্ধু। দুই কন্যাই আলাদা ধরনের বন্ধু, আলাদা ব্যক্তিত্ব। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্ক।"
'আমি গর্বিত'
এত বিতর্কের পরও সারিকার জীবনে কোনো আফসোস নেই। তিনি বলেন, "আমি আজ যে পর্যন্ত এসেছি, সে জন্য গর্বিত। আমার জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত আমাকে এই পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।" সারিকার জীবনদর্শন খুবই স্পষ্ট: "সুখ তখনই, যখন আপনি সত্যিই সুখী হতে চান। যা আনন্দ দেয় না, তাতে না যান। নিজের খুশিতে জীবন কাটান, কাউকে আঘাত না দিয়ে মজা করুন।"