স্মৃতি হারানো কালিধরের নতুন জীবনের গল্প: বন্ধুত্ব, বেঁচে থাকা আর আশার গল্প ‘কালিধর লাপাত্তা’

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫

মানুষ কখনো ইচ্ছায়, কখনো পরিস্থিতির চাপে হারিয়ে যায়। ‘কালিধর লাপাত্তা’ এমনই এক আবেগঘন গল্প, যেখানে হারিয়ে যাওয়া একজন মানুষ নতুন করে খুঁজে পান নিজেকে, জীবনকে এবং সম্পর্কের মানে। পরিচালনা করেছেন মধুমিতা। অভিষেক বচ্চন ও দায়ভিক বাঘেলার অভিনয়ে এই মানবিক গল্পটি ৪ জুলাই মুক্তি পেয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জি–ফাইভে।

সিনেমার কেন্দ্রে রয়েছেন কালিধর (অভিষেক বচ্চন), একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তি যিনি স্মৃতিভ্রষ্টতায় আক্রান্ত। ধীরে ধীরে নিজের নাম, অতীত ভুলে যেতে থাকেন তিনি। চিকিৎসা ব্যয়বহুল জেনে তার পরিবারের সদস্যরা একটি নির্মম সিদ্ধান্ত নেয়—তাকে সরিয়ে দেওয়ার। চার ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় কালিধরকে তার দুই ভাই নিয়ে যায় কুম্ভমেলায়। সেখানেই তারা ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে ফেলে রেখে আসে, যেন সে নিজেই হারিয়ে যায়।

ভাইয়েরা লোকদেখানোভাবে নিখোঁজের অভিযোগ করলেও, তাদের উদ্দেশ্য ছিল কালিধরকে স্থায়ীভাবে সরিয়ে দেওয়া।

এরপর এক মন্দিরের আঙিনায় শুরু হয় কালিধরের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়। সেখানে তার পরিচয় হয় বল্লু (দায়ভিক বাঘেলা) নামের মাত্র আট বছরের এক পথশিশুর সঙ্গে। বল্লু যেমন বুদ্ধিমান, তেমনি সংবেদনশীল। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে এক অদ্ভুত অথচ গভীর বন্ধন।

বল্লু যেন কালিধরের অভিভাবক হয়ে ওঠে। আবার কালিধরও তাকে আগলে রাখতে শুরু করেন। দুজনে মিলে তৈরি করে ‘ইচ্ছার তালিকা’, যেখানে তারা একে একে পূরণ করতে থাকে জীবনের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো।

এদিকে কালিধরের ভাইয়েরা দেনার চাপে পড়ে ফের তাকে খুঁজতে শুরু করে। কারণ, তাকে ছাড়া তাদের সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তারা ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ অফিসার সুবোধ (মোহাম্মদ জিশান আইয়ুব)-এর সহায়তায় শুরু করে খোঁজ।

সিনেমার গল্প ধীর গতিতে এগোলেও কিছু মুহূর্ত দর্শকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। বল্লু ও কালিধরের সম্পর্ক অনন্য এবং মর্মস্পর্শী। দায়ভিক বাঘেলা শিশুশিল্পী হিসেবে অনবদ্য অভিনয় করেছেন। তার চোখেমুখে ফুটে উঠেছে জীবনের কষ্ট, আবার শিশুসুলভ দুষ্টুমিও। অভিষেক বচ্চন এই সিনেমায় অনেকদিন পর নিজের অভিনয়ের সেরাটা দিয়েছেন। তার সংযত, গভীর অভিনয় চরিত্রকে বাস্তব করে তুলেছে।

তবে সিনেমার কিছু অংশ কিছুটা দুর্বল। ‘ইচ্ছার তালিকা’র দৃশ্যগুলো আরও আবেগপূর্ণ হতে পারত। কালিধর ও মীরার (অন্য একটি চরিত্র) সম্পর্কের জায়গাতেও আরও গভীরতা চাওয়া যেত। তবু সিনেমার আসল শক্তি মানুষের প্রতি বিশ্বাস, ভালোবাসা আর অচেনা বন্ধুত্ব।

‘কালিধর লাপাত্তা’ মনে করিয়ে দেয়, জীবন যত কঠিনই হোক, একজন বল্লুর মতো বন্ধু থাকলেই আবার শুরু করা যায়। রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও কখনো কখনো নীরব সম্পর্কই হয়ে ওঠে জীবনের সবচেয়ে গভীর সঙ্গী।

কালিধর লাপাত্তা’ একটি অনুভবমূলক ড্রামা ঘরানার সিনেমা, যা পরিচালনা করেছেন মধুমিতা। অভিষেক বচ্চন, দায়ভিক বাঘেলা ও মোহাম্মদ জিশান আইয়ুবের অভিনয়ে এই সিনেমা এক অনন্য মানবিক গল্প তুলে ধরে। ৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জি–ফাইভে মুক্তি পাওয়া ছবিটি হারিয়ে যাওয়া এক মানুষ ও এক পথশিশুর মধ্যে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব, বিশ্বাস এবং জীবনের নতুন মানে খুঁজে পাওয়ার কাহিনি নিয়ে এগিয়েছে। বাস্তবতার সঙ্গে মিশে থাকা সম্পর্কের জটিলতা ও আবেগের গভীরতা এই সিনেমার মূল শক্তি।