মায়ের উত্তরসূরি থেকে সাহসী অভিনেত্রী, তারপর রাজনীতিক—বহুমাত্রিক মুনমুন সেন

বাংলা ও হিন্দি সিনেমার কিংবদন্তি সুচিত্রা সেনের কন্যা মুনমুন সেন নিজেই এক অনন্য পরিচয়ে পরিচিত। তবে মায়ের মতো খুব অল্প বয়সে নয়, তিনি অভিনয়ে এসেছিলেন জীবনের পরিণত এক পর্যায়ে—বিবাহিত জীবন ও মাতৃত্বের পর।

তারকা পরিবারে 
মুনমুন সেনের জন্ম এমন এক পরিবারে, যেখানে তার মা সুচিত্রা সেন ছিলেন রূপালি পর্দার এক দেবীস্বরূপ। তবু সেই উজ্জ্বলতার মাঝেও মুনমুন দীর্ঘদিন রয়ে যান প্রচারের বাইরে। সুচিত্রা সেনের ব্যক্তিগত জীবন রক্ষার কড়াকড়ির জন্যই মূলত মেয়ের শৈশব কেটেছে মিডিয়া ও ক্যামেরার আড়ালে।


চলচ্চিত্রে অধিকাংশ তারকা যখন কেরিয়ার শুরু করেন টিনএজ বা কুড়ির কোঠায়, সেখানে মুনমুন সেন অভিনয়ে আসেন ত্রিশোর্ধ বয়সে, বিবাহ ও দুই কন্যা সন্তানের জননী হওয়ার পর। সাহসী এই সিদ্ধান্তের ফল মেলে দ্রুত—গ্ল্যামারাস ও সাহসী চরিত্রে নিজস্ব একটি ধারা তৈরি করেন তিনি।


অভিনয়ে আসার আগে মুনমুন ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষিকা। পড়াশোনা করেছেন অক্সফোর্ডের সোমারভিল কলেজ এবং শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষকতা ছেড়ে তিনি পা রাখেন বিনোদন জগতে—যা ছিল এক দুঃসাহসী পদক্ষেপ।


১৯৮০-এর দশকে মুনমুন সেনের অভিনীত চরিত্রগুলো ছিল সময়ের তুলনায় ব্যতিক্রমী এবং সাহসী। সুচিত্রা সেনের গম্ভীর ও গর্বিত পর্দা-পারসোনার ঠিক বিপরীতে, মুনমুন এক গ্ল্যামারাস, খোলামেলা ও সাহসী ভাবমূর্তি গড়ে তোলেন। তার সাহসী ফটোশুট ও সিনেমা সে সময়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।


গ্ল্যামার পেরিয়ে এক সময়ে মুনমুন সেন যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া আসন থেকে বিজেপির প্রবীণ নেতা বসুদেব আচার্যকে পরাজিত করে তিনি হন সংসদ সদস্য। যদিও তার রাজনৈতিক সফর দীর্ঘস্থায়ী ছিল না, তবে এটি ছিল তার জীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক।


সংক্ষেপে বললে, সুচিত্রা সেনের কন্যা হিসেবে পরিচিতি পেলেও মুনমুন সেন নিজস্ব পরিচয়ে গড়ে তুলেছেন নিজের ক্যারিয়ার—অভিনয় থেকে রাজনীতি, সবখানেই রেখেছেন নিজস্ব স্বাক্ষর।