গর্ভপাতের পরও শুটিং, সন্তান জন্মের পরদিনই ছাঁটাইয়ের বার্তা— টেলিভিশনের আড়ালের নির্মম বাস্তবতা বললেন স্মৃতি ইরানি


সম্পূর্ণ প্রতিবেদন:
ভারতের জনপ্রিয় টেলিভিশন অভিনেত্রী ও বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি আজ শুধু রাজনীতির মঞ্চে নয়, দর্শকদের হৃদয়ে ‘তুলসী’ নামে আজও অম্লান। তবে এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে বহু যন্ত্রণার অধ্যায়, রয়েছে অবিশ্বাস্য সংগ্রাম ও বলিদান। সম্প্রতি এক পডকাস্টে স্মৃতি ইরানি তুলে ধরেছেন তাঁর জীবনের এক নির্মম অধ্যায়—যেখানে মাতৃত্ব, শারীরিক কষ্ট, কাজের চাপ এবং পেশাগত অবিচারের মাঝে দাঁড়িয়ে তাকে লড়াই করে যেতে হয়েছে প্রতিনিয়ত।

রাজ শামানির পডকাস্টে স্মৃতি জানান, তাঁর পুত্র সন্তান জন্মের মাত্র তিন দিনের মাথায় তাঁকে ফিরতে হয়েছিল স্টার প্লাসের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘কিউকি সাস ভি কভি বহু থি’-র সেটে। তিনি বলেন,

“আমার ছেলে তখন মাত্র তিন দিন বয়সী। আমি ‘কিউকি’র সেটে ফিরে এসেছিলাম। কেন? কারণ রাত ১০টা ৩০ মিনিটে দর্শকরা নতুন পর্ব দেখতে চাইতেন।”

সে সময় তিনি শুধুই একজন নবজাতকের মা ছিলেন না—তিনি ছিলেন ক্লান্ত, মানসিকভাবে বিধ্বস্ত এবং চরম পেশাগত চাপে বিপর্যস্ত এক নারী। শুধুমাত্র দর্শকের প্রত্যাশা মেটানোর জন্য নিজের শরীর এবং মানসিক অবস্থা উপেক্ষা করেই শুটিংয়ে ফিরতে হয়েছিল তাকে।

স্মৃতি আরও জানান, তিনি এমন সময়েও শুটিং চালিয়ে গেছেন যখন তিনি সদ্য গর্ভপাতের যন্ত্রণার মধ্যে ছিলেন। কিন্তু চ্যানেল বা প্রোডাকশনের কেউ একজন এসে বলেছিল, “স্মৃতি ইরানি তো শুটিংয়ে আসছেন না, ও মিথ্যা বলছে, ওর কিছুই হয়নি।”

এই পরিস্থিতিতে স্মৃতিকে প্রমাণ দিতে হয়েছিল যে তিনি সত্যিই গর্ভপাত করেছিলেন। তিনি বলেন,

“আমাকে হাসপাতালের মেডিকেল রিপোর্ট সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়েছিল, শুধু এই প্রমাণ দিতে যে আমি সত্যিই গর্ভপাতের মধ্য দিয়ে গিয়েছি।”

প্রোডিউসার রবি চোপড়া তাকে মাত্র এক সপ্তাহের ছুটি দিয়েছিলেন। অথচ ধারাবাহিকের চাপে সে ছুটিরও বাস্তবায়ন হয়নি।

‘কিউকি’র পাশাপাশি ‘কুছ দিল সে’ নামের আরেকটি শোতেও স্মৃতিকে শারীরিক সীমা ছাড়িয়ে কাজ করতে হয়েছিল। তিনি জানান,

“আমি গর্ভাবস্থার নবম মাসের শেষ দিন পর্যন্ত শুটিং করেছি। আমি তখন একজন অতিথির সঙ্গে একটি টক শো করছি। প্রযোজকরা জানিয়ে দিয়েছিল, সন্তানের জন্মের ৩০ দিনের মধ্যে ফিরতে হবে।”

নিজের স্বাস্থ্য, গর্ভকালীন ঝুঁকি এবং পরিবারের উদ্বেগ সত্ত্বেও কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছিল। কারণ তখন তার পরিবার অর্থনৈতিক সংকটে ছিল, বাড়ির ঋণ শোধ করতে হচ্ছিল।

স্মৃতি ইরানির জীবনের সবচেয়ে নির্মম অভিজ্ঞতা আসে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরদিনই। তিনি জানান,

“আমি তখন হাসপাতালে, সদ্য সন্তান জন্ম দিয়েছি। হঠাৎ দেখি আমার ফোনে বার্তা—‘আপনাকে বরখাস্ত করা হলো।’ অথচ তার আগের দিনই আমি শুটিং করেছিলাম। ওরা যেন কেবল হাসপাতালে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল, তারপরই সিদ্ধান্তটা জানিয়ে দিলো।”

স্মৃতির দাবি, প্রোডাকশন হাউস আগেই ঠিক করে রেখেছিল, তাঁর রেকর্ড করা ফুটেজ ব্যবহার করে সিরিজে নতুন কোনো অভিনেত্রীকে আনা হবে।

তবে এসব কষ্টের পরও স্মৃতি কাউকে দোষারোপ করেননি, কাউকে কটাক্ষও করেননি। তিনি বলেন,

“আমি প্রতিশোধ নিইনি। শুধু হেসেছিলাম। আমি জানতাম, কর্মফল ঠিকই সবাই পাবে। তারা বড় তারকা এনে শো চালাতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই শো আর কোনোদিন শুরুই হয়নি।”

এই সাক্ষাৎকারে স্মৃতি ইরানির ব্যক্তিজীবনের গভীর দুঃখ ও সংগ্রামের বাস্তব দিকগুলো উঠে আসে। একজন অভিনেত্রী হিসেবে শুধু ক্যামেরার সামনে নয়, ক্যামেরার পেছনেও যে কী ভীষণ চাপ ও অবিচারের শিকার হতে হয়, স্মৃতির অভিজ্ঞতাই তার প্রমাণ।

আজ যাঁকে সবাই সফল রাজনীতিক ও প্রভাবশালী নারী হিসেবে চেনে, তাঁর জীবনের এমন অধ্যায় অনুপ্রেরণা জোগায় অসংখ্য নারীর জন্য—যারা প্রতিকূলতার মুখেও হাল ছাড়েন না।